Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশি জাতের মাল্টার সম্প্রসারণ

আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশি জাতের মাল্টার সম্প্রসারণ
কৃষিবিদ মো. রাসেল সরকার

মাল্টা অত্যন্ত সুস্বাদু, রসালো ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। ভিটামিন ‘সি’ সম্মৃদ্ধ ফলগুলোর মধ্যে মাল্টা অন্যতম। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের কাছে এটি সমান জনপ্রিয়। কথায় বলে, ‘ফল খাই, বল পাই’। ফল যত তাজা খাওয়া যায় ততই ভালো, এতে ফলের পুষ্টিমান অটুট থাকে। তাজা ফল ভক্ষণের মাধ্যমে একদিকে যেমন ফলের পরিপূর্ণ আস্বাদ গ্রহণ করা যায়, অন্যদিকে সঠিক পুষ্টিগুণও পাওয়া সম্ভব হয়। বর্তমানে দেশে আমদানিকৃত বিদেশি ফলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাল্টা। বিদেশি মাল্টা আমদানিতে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে, অধিকন্তু দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকায় এসব ফলের স্বাদ ও   পুষ্টিমান ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বিগত কয়েকবছরে সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ বেশ সম্প্রসারিত হয়েছে।  
আমদানি বাণিজ্য
বাংলাদেশে সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল তথা মধ্য মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত মধুমাস ধরা হয় এবং এসময়ই নানান দেশীয় ফলের প্রাচুর্য থাকে। বছরের অন্যান্য সময়ে এত বেশি দেশীয় ফল পাওয়া যায় না। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে জানুয়ারি পর্যন্ত কুল ও পেয়ারা বাদে অন্য দেশীয় ফল বাজারে তেমন থাকে না, এসময় ফলের চাহিদা পূরণে বিদেশি ফলই একমাত্র ভরসা। একটি হিসেব মতে, দেশি জাতের ফলের মাধ্যমে দেশের মোট ফলের চাহিদার মাত্র ৩৫ শতাংশ পূরণ হয়। বাকি ৬৫ শতাংশ ফল বাহিরে থেকে আমদানি করতে হয়। মূলত ৬ ধরনের বিদেশি ফল (আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, বেদানা, নাশপাতি) সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয়। দেশে কিছু কিছু বিদেশি ফলের উৎপাদন শুরু হয়েছে তবু এখনো বিদেশি জাতের ফল আমদানি নির্ভরতা প্রায় ৯০ শতাংশের অধিক। দেশে আমদানিকৃত ফলের ৮৫% আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙ্গুর-এই ৪ ধরনের ফল। পণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সমুন্ডি (ওহফবী গঁহফর) এর তথ্য অনুযায়ী মাল্টা ফল আমদানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে ৫ম। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙ্গুর ফলের শুল্ককরসহ আমদানি ব্যয় ৯৪৬ কোটি টাকা যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮০২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কাস্টমস এর তথ্যানুযায়ী দেশে ২০১৭-১৮ সালে শুধু মাল্টা ও কমলা আমদানি করা হয় ১,১৭,১৭০ মেট্রিক টন যাতে প্রায় ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মূলত ৪৬টি দেশ থেকে উল্লিখিত ৬ ধরনের বিদেশি ফল আমদানি করা হয়। আমদানিকৃত বিদেশি ফলের সিংহভাগই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশে আসে। অল্পকিছু স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারত ও ভুটান থেকে আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর এর হিসাব অনুযায়ী, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে মোট ৪.৫৮ লাখ মেট্রিক টন বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল আমদানি হয়েছে। শুল্ককরসহ যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৪২২ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট বিদেশি ফল আমদানি হয়েছে ৪.৬১ লক্ষ টন। পাঁচ বছরে আমদানি বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১৬ হাজার টন এবং মোট আমদানির প্রায় ৭৭ শতাংশই হচ্ছে আপেল ও মাল্টা। আশার কথা হচ্ছে, দেশে মাল্টা চাষ সম্প্রসারণের সাথে সাথে বিদেশি মাল্টা আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমছে।
দেশে মাল্টা চাষের হালচাল
২০০৪ সালে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে বারি মাল্টা-১ নামে দেশীয় মাল্টার একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলো (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ও সিলেট অঞ্চল ছাড়াও বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা, বরেন্দ্রভূমি, উত্তরাঞ্চলসহ প্রায় সমগ্র দেশে মাল্টার চাষাবাদ হচ্ছে। চারা রোপণের ১-২ বছরের মধ্যেই মাল্টা গাছে ফুল ও ফল আসে এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে একাধারে             ২০-২৫ বছর পর্যন্ত একেকটি গাছ থেকে পূর্ণমাত্রায় ফল সংগ্রহ করা সম্ভব। এ দেশের প্রায় সকল অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বারি মাল্টা-১ চাষের অনুকূল এবং খুব অল্প সময়ের মাঝেই ফল সংগ্রহ করা যায়। এর ফলে দেশের বিভিন্ন জেলায় ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছোট বড় নানা আকারের মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। এসব ফলবাগান আগামী ২-৩ বছরের মাঝেই পূর্ণ উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিদেশি মাল্টা ও কমলার আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং দেশের মাটি ও জলবায়ু উপযোগী নতুন উদ্ভাবিত মাল্টার জাতের অধিক ফলনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সারাদেশে লেবুজাতীয় ফসলের (মাল্টা, কমলা, লেবু প্রভৃতি) চাষ সম্প্রসারণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০২৩ সালে শেষ হতে যাওয়া ৫ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৩০ টি জেলার ১২৩টি উপজেলায় ৫৯১০০টি বিভিন্ন আয়তনের বাগান স্থাপিত হবে এবং প্রায় ৫০০০ পুরাতন মাল্টাবাগানের ব্যবস্থাপনা হবে। প্রকল্প শেষে দেশে মাল্টা ও কমলার উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাল্টা ও কমলা উৎপাদিত হবে যাতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অধিক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়াও, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রকল্পের মাধ্যমেও সাইট্রাস জাতীয় ফলের চাষাবাদ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ডিএইর তথ্য মতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে কমলা ও মাল্টার উৎপাদন হয়েছে যথাক্রমে ৪০,৩১৭ টন ও ২৮,০৪১ টন। দেশে চাষকৃত কমলার বার্ষিক উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ যেখানে মাল্টার ক্ষেত্রে প্রায়            ১০-১৫ শতাংশের অধিক।
দেশীয় মাল্টায় অনীহার কারণ
যদিও বিগত কয়েকবছরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে তথাপি দেশীয় জাতের মাল্টার ক্ষেত্রে সিংহভাগ ভোক্তার অনীহা লক্ষ করা যায়। দেশীয় মাল্টার প্রতি অনীহার প্রধান কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হলো। ১. কথায় বলে, “আগে দর্শনধারী, তারপর গুণ বিচারী”, একথা দেশি জাতের মাল্টার ক্ষেত্রে প্রায় পুরোপুরি খাটে। দেশি জাতের মাল্টা পরিপক্ব অবস্থায়ও সাধারণত হলুদাভ সবুজ থাকে। ২. সাধারণভাবে মনে করা হয় বিদেশি ফলের পুষ্টিমান অধিক মাত্রায় বিদ্যমান থাকে। এজন্য বিদেশি ফলের প্রতি অতিমাত্রায় দুর্বলতা এবং দেশীয় ফলের ক্ষেত্রে অজ্ঞতাজনিত অনীহা কাজ করে। ৩. মাল্টা          নন-ক্লাইমেকটেরিক ফল বিধায় গাছ থেকে সংগ্রহ করার পর তা আর পাকে না। অসাধু অনেক ব্যবসায়ী ও চাষি মাল্টা পরিপক্ব হওয়ার পূর্বেই উচ্চমূল্য পাওয়ার জন্য গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারজাত করে। এর ফলে মাল্টার পরিপূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় না এবং ভোক্তার মনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। ৪. দেশীয় মাল্টার পুষ্টিগুণ ও স্বাদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় ভোক্তাদের দেশি জাতের মাল্টার প্রতি অনীহা দেখা যায়।
গৃহীত ব্যবস্থা/উদ্যোগ
বিদেশি মাল্টার আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশি জাতের মাল্টার বাজার সৃষ্টির বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোক্তার নিকট একে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। এই যুগপৎ বিষয়ের সম্মিলন ঘটিয়ে ভোক্তা এবং নতুন মাল্টা চাষি ও কৃষি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য নিম্নোক্ত সুপারিশ উপস্থাপন করা হলো। ১. গবেষণার মাধ্যমে ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষণের নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং উজ্জ্বল কমলা বর্ণের উচ্চফলনশীল আগাম ও নাবী জাত উদ্ভাবন করা।  ২. সরকারি হর্টিকালচার সেন্টার ও বেসরকারি নার্সারিগুলোতে অধিক পরিমাণে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে চারার সহজলভ্যতা বৃদ্ধি করা। ৩. বসতবাড়িতে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচুসহ অন্যান্য ফলের সাথে মাল্টার চারা রোপণের জন্য জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ৪. বিদেশি মাল্টা আমদানিতে শুল্কহার বাড়িয়ে দেশীয় জাতের মাল্টার বাজারজাতকরণের সুযোগ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা। ৫. জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ের ফল, সবজি কিংবা কৃষি প্রযুক্তি মেলা, প্রদর্শনী, মাঠ দিবসসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন          উৎসব-অনুষ্ঠানে দেশি জাতের মাল্টা ও এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক আলোচনা ও লিফলেট বিতরণ করা। ৬. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অন্যান্য সকল অন্তর্জাতিক মাধ্যমে দেশীয় মাল্টার পরিচিতি, পুষ্টিগুণ ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে তথ্যনির্ভর প্রতিবেদন/ভিডিওচিত্র প্রকাশ করা। ৭. দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও কৃষকের নিজস্ব উদ্যোগে বিগত কয়েক বছরে ছোট বড় যেসব মাল্টাবাগান গড়ে উঠেছে সেসব কৃষি উদ্যোক্তার সফলতার গল্প তুলে ধরা। ৮. জেলা, অঞ্চল বা জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ফল চাষিকে পুরস্কৃত করা। ৯. উৎপাদিত ফলের সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণের পাশাপাশি উন্নত প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি করা। ফল উৎপাদন ও বিপণনের সাথে জড়িত কৃষক ও ব্যবসায়ীদের রপ্তানিযোগ্য ও মানসম্মত আধুনিক ফল উৎপাদন প্রযুক্তি, সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ প্রভৃতি বিষয়ে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।  
বর্তমানে বাংলাদেশে দেশীয় জাতের মাল্টা (বারি মাল্টা-১) চাষে নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। দেশীয় জাতের মাল্টাকে যথাযথ ব্রান্ডিং করতে পারলে একদিকে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ অন্যদিকে বিদেশি মাল্টার আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।  সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, যথাযথ প্রক্রিয়াজাতকরণ, সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা, ব্যাপক প্রচার প্রচারণা এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ বাংলাদেশকে মাল্টা আমদানিকারক দেশ হতে রপ্তানিকারক দেশের কাতারে উন্নীত করতে পারে। য়  

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, তারাগঞ্জ, রংপুর। মোবাইল : ০১৭১৭-৪৫২৫৩৩, ই-মেইল: russelsarker06@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon